Nojoto: Largest Storytelling Platform

'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির। প্রজাপতির

'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির।
প্রজাপতির আয়ুর মতোই আমাদের তকদির-

ফুলের কাছে সোহাগ সোহাগ, গাছের কাছে ঘৃণ্য
অভিযোগের স্বল্প আকার। ছায়ায় বিস্তীর্ণ...'
























শমিতের চিঠির শুরুর চারটে লাইন পড়েই কেঁপে উঠলো পর্ণা। কাব্যি করতে কবে থেকে শুরু করেছিল শমিত? ছোট থেকেই তো বাংলার সাথে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক! সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা। প্রথম যেদিন রংনাম্বারে তাদের আলাপ সেদিন উল্টোপারের ছেলেটা ঠিক করে কথা অবদি বলতে পারতো না। একবছর ধরে তারা শুধু ফোনে কথা বলেছে দিনরাত। বেশির ভাগ সময় তো তাকেই কথা বলতে হতো। আর ওই পারে শমিত শুধু 'হুঁ,হ্যাঁ' দিয়েই সারা। তারপর এলো সেইদিন। তাদের প্রথম দেখা.. আবার চিঠিটার দিকে মুখ নামালো পর্ণা...

'সেদিন ভীষণ কালচে আকাশ, ঝড় উঠেছে বুকে-
ভিড় স্টেশনে চাঁদ উঠলো, তোমার শান্ত মুখে।

প্রাচীন কোনো গাছের পাতা, শুকিয়ে যাওয়ার পরে-
যেমন করে উড়ে উড়ে যায় কালবোশেখী ঝড়ে,

তেমন হলো মনের দশা, তোমার দু-চোখ দেখে
চিতায় উঠেই মানুষ যেমন শান্তি পেতে শেখে।'

চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো পর্ণা।নিচের তলা থেকে কিসের যেন আওয়াজ হচ্ছে। খোলা জানলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে সে দেখলো কিছু লোক  কাপড় আর বাঁশ নিয়ে এসে গেটের কাছে জড়ো করছে। আর দুটো লোক কোদাল আর গাঁইতি নিয়ে পাশে মাটি খুঁড়ছে। বাঁশগুলো পুঁতবে বোধহয়।জানলাটা বন্ধ করে আবার বিছানায় এসে বসলো। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো ..

'তোমার বাবা মন বোঝেনা। মায়ের চোখের জল-
ঝর্ণা হয়ে বইতো তোমার গালে অনর্গল।

আমিও তখন বাউন্ডুলে, আহত, খুব জ্বর।
ঠোঁটের নীচে অল্প জমি, ইবাদতের ঘর।

নুন আনি আর পান্তা ফোরায়, হার মানিনি তবু-
বেকার ছেলের পকেট ফাঁকা। বুকভর্তি সবুর।

তুমিও ঠিক দিকভোলা এক জলফড়িংয়ের মতো-
সকল ব্যাথায় পাখনা মেলে জুড়িয়ে দিলে ক্ষত।'

ঝাপসা হয়ে এলো চোখের ভিতরটা। শমিতের কাছে সত্যিই তো তখন পর্ণা ছাড়া আর কেউ নেই। রোজ রোজ বাবার হাতে অত্যাচারিত হওয়া তার একটা গাঢ় অন্ধকার জীবনে শমিত যেমন অসংখ্য জোনাকির আলো নিয়ে এসেছিল, তেমন শমিতের জীবনেও তো সে নিজে চাঁদের থেকে কম কিছু ছিলোনা। একের পর এক ব্যর্থতা যখন শমিতকে গ্রাস করে নিচ্ছিল তখন একমাত্র সে নিজে ছাড়া আর কেউ শমিতকে সামলাতে পারতোনা। শক্ত করে নিজের সব ভাঙ্গনে শমিত ওর হাতটা বরাবর ধরে থাকতো। দুনিয়ার সব্বার দিকে আঙুল তুললেও পর্ণা বুকে টেনে নিলেই তো লোকটা এক লহমায় ঠান্ডা হয়ে যেত। চোখ ভিজে গেলো। ভালোবাসা জেদের কাছে বড্ড নিষ্ক্রিয়। আবার চোখ নামালো চিঠির দিকে...

'চিঠির কাছে মুহূর্ত দিই, প্রেমের কাছে ইতি-
ভুল ঠিকানার এপার ওপার স্মৃতির বিস্তৃতি।

দেহের কাছে দুহাত পাতি, মনের কাছে আয়না-
দগদগে সব ঘা দেখা যায়, তোমায় দেখা যায়না।

জেদের কাছে নতজানু হই, প্রেমের কাছে ম্লান,
প্রতিশ্রুতি বয়সে বড়, সম্মানে অভিমান।

কেমন করে ভাঙলে সকল, সোহাগ, আদরভূমি?
দাঁড়িয়ে আজও ঠায় সেখানেই। কোথায় আছো তুমি?'

একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি থেকে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছিলো ওদের। শমিতকে প্রচন্ড ভালোবাসতো বলেই পর্ণা কোনদিনই সহ্য করতে পারতো না শমিতের অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা। সেবার অফিস ট্রিপের শেষে, বিদেশ থেকে ফেরার পর যখন ফেসবুকে কিছু ছবি দেখে জানতে পারলো যে শমিত তার এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছিলো , আর নিজেকে সামলাতে পারেনি পর্ণা। সেই যে সবকিছু ভেঙে গেলো, আর কিছুতেই ঠিক করতে দেয়নি সে শমিতকে। শমিতের হাজার চেষ্টা করার পরেও জেদ থেকে একটুও নড়েনি সে নিজে। তারপর রোহন এলো তার লাইফে। আর ফেরত আসার কথা একবার ও ভাবেনি পর্ণা। কোনোদিনও।

এর মধ্যেই কাকীমা এলো একবার। ভাঙা গাল, এলোমেলো চুল, দিকভ্রান্ত চোখ। ঘরে ঢুকে জানলাটা খুলে দিয়ে চলে গেলো। কথা বললো না একটাও। বেশ বুঝতে পারলো তার আসাটা একদমই পছন্দ করেনি কাকিমা। শেষবার যখন কাকিমার সাথে দেখা হয়েছিল তখন কাকিমা তাকে নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু ভাবত কি? মনে করার চেষ্টা করলো পর্ণা। জানলার কাছে আর একবার উঠে গেল। ওরা বাঁশগুলো বেঁধে ফেলেছে, এবার কাপড় দিয়ে ঢাকবে।
শমিত যে কবে থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেছে তার খবর কোনোদিন পায়নি পর্ণা। আসলে খবর নিতেই চায়নি সে কোনোদিন। আবার ফিরে গেল চিঠির পাতায়। চোখ মুছে পড়তে শুরু করলো...

' ভুল বুঝে তুমি হারিয়ে গ্যালে, অবিশ্বাসের অরণ্যে-
ভালোবাসার ভাঙন আছে। ভেতর থেকে মরণ নেই।

তারপরে আর খোঁজ রাখনি, কেমন আছো, ভালো?
আমার পাড়ায় নামিয়ে আঁধার, কোথায় প্রদীপ জ্বালো?

হয়তো এখন সব ভুলিয়ে শরীর শরীর সুখে-
তুমি গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ো মিথ্যেকথার বুকে।

মন তবুও কেমন বোকা। তোমার পাড়ায় চলে।
অন্ধ ভাবে লোকে আমায়। আলোর গল্প বলে।

যাও উড়ে যাও, মন পাখি আজ, তাকে খবর দিও 
আর জ্বলি না এখন আমি। ভীষণ নিষ্ক্রিয়...

যাওয়ার সময় হয়ে এলো। বিদায় কলম, গিটার..
তোমরা আমায় শান্তি দিলেও মুক্তি দেবে চিতা।

এই জনমে হলোনা তো ছাই। পরের জনমে তবু....
চাইবো তাকে সব্বার থেকে। পৃথিবী বলবে 'কবুল'।'

শমিতের দাদা কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি পর্ণা। খবরটা শমিতের দাদাই দিয়েছিল তাকে কাল অফিসে গিয়ে। আর হাতে এই চিঠিটা।
চোখে চোখ পড়তেই  রুমালটা এগিয়ে দিলো দাদা। বললো 'চোখ'টা মোছ। তোর বর আর ছেলেকে নিয়ে আসিস কিন্তু কাল। শমিতের শেষ ইচ্ছা ছিল...'
- দাদা তোমরা ওকে বোঝাও নি কেনো?
- চেষ্টা করিনি ভাবছিস? তুই তো চিনতিস ওকে। ও কারোর কথা শুনতো ,তোর ছাড়া? কাউকে চিনতো তোকে ছাড়া? কেনো এমন করলি বল তো তুই? একবার কথা বলতে পারলিনা....? 
কেঁদে উঠলো দাদা। পর্ণার পর শমিতের খুব কাছের বলতে এই একটা লোকই ছিল। চোখ মুছতে মুছতে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ওদিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে পর্ণা এবার চিঠিটার শেষের দিকটা পড়তে শুরু করলো -

'এই চিঠি তুমি পাবে যেদিন জারি হবে সমন-
সেদিন তোমার ব্লকলিস্ট থেকে উঠিও আমার নাম।
আর কোনোদিন হবেনা দেখা, করবোনা আর ফোন।
জীবন দিয়েই শিখবো প্রিয়া, উপেক্ষাদের দাম।

সেদিন তুমি কাঁদবে নাকি ছিঁড়েই দেবে আমায়!
নিথর ঠোঁটে ঠেকাবে কি তোমার নরম গাল?
ঠোঁটের রঙিন দাগ রেখো প্লিজ আমার মলিন জামায়,
নিপুণ হাতে লুকিয়ে নিও খুন আর তরোয়াল...।

মাফ করেছি তোমায় কবেই। এইটুকু স্রেফ জেনো...

আজন্মকাল তোমার প্রেমে বিদ্ধ এ লোক,
তোমায় ছাড়াই তোমার সাথে বৃদ্ধ হলো।

তোমায় ছাড়াই তোমার সাথে বৃদ্ধ হলো.... #Read_the_full_article
'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির।
প্রজাপতির আয়ুর মতোই আমাদের তকদির-

ফুলের কাছে সোহাগ সোহাগ, গাছের কাছে ঘৃণ্য
অভিযোগের স্বল্প আকার। ছায়ায় বিস্তীর্ণ...'

শমিতের চিঠির শুরুর চারটে লাইন পড়েই কেঁপে উঠলো পর্ণা। কাব্যি করতে কবে থেকে শুরু করেছিল শমিত? ছোট থেকেই তো বাংলার সাথে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক! সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা। প্রথম যেদিন রংনাম্বারে তাদের আলাপ সেদিন উল্টোপারের ছেলেটা ঠিক করে কথা অবদি বলতে পারতো না। একবছর ধরে তারা শুধু ফোনে কথা বলেছে দিনরাত। বেশির ভাগ সময় তো তাকেই কথা বলতে হতো। আর ওই পারে শমিত শুধু 'হুঁ,হ্যাঁ' দিয়েই সারা। তারপর এলো সেইদিন। তাদের প্রথম দেখা.. আবার চিঠিটার দিকে মুখ নামালো পর্ণা...
'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির।
প্রজাপতির আয়ুর মতোই আমাদের তকদির-

ফুলের কাছে সোহাগ সোহাগ, গাছের কাছে ঘৃণ্য
অভিযোগের স্বল্প আকার। ছায়ায় বিস্তীর্ণ...'
























শমিতের চিঠির শুরুর চারটে লাইন পড়েই কেঁপে উঠলো পর্ণা। কাব্যি করতে কবে থেকে শুরু করেছিল শমিত? ছোট থেকেই তো বাংলার সাথে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক! সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা। প্রথম যেদিন রংনাম্বারে তাদের আলাপ সেদিন উল্টোপারের ছেলেটা ঠিক করে কথা অবদি বলতে পারতো না। একবছর ধরে তারা শুধু ফোনে কথা বলেছে দিনরাত। বেশির ভাগ সময় তো তাকেই কথা বলতে হতো। আর ওই পারে শমিত শুধু 'হুঁ,হ্যাঁ' দিয়েই সারা। তারপর এলো সেইদিন। তাদের প্রথম দেখা.. আবার চিঠিটার দিকে মুখ নামালো পর্ণা...

'সেদিন ভীষণ কালচে আকাশ, ঝড় উঠেছে বুকে-
ভিড় স্টেশনে চাঁদ উঠলো, তোমার শান্ত মুখে।

প্রাচীন কোনো গাছের পাতা, শুকিয়ে যাওয়ার পরে-
যেমন করে উড়ে উড়ে যায় কালবোশেখী ঝড়ে,

তেমন হলো মনের দশা, তোমার দু-চোখ দেখে
চিতায় উঠেই মানুষ যেমন শান্তি পেতে শেখে।'

চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো পর্ণা।নিচের তলা থেকে কিসের যেন আওয়াজ হচ্ছে। খোলা জানলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে সে দেখলো কিছু লোক  কাপড় আর বাঁশ নিয়ে এসে গেটের কাছে জড়ো করছে। আর দুটো লোক কোদাল আর গাঁইতি নিয়ে পাশে মাটি খুঁড়ছে। বাঁশগুলো পুঁতবে বোধহয়।জানলাটা বন্ধ করে আবার বিছানায় এসে বসলো। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো ..

'তোমার বাবা মন বোঝেনা। মায়ের চোখের জল-
ঝর্ণা হয়ে বইতো তোমার গালে অনর্গল।

আমিও তখন বাউন্ডুলে, আহত, খুব জ্বর।
ঠোঁটের নীচে অল্প জমি, ইবাদতের ঘর।

নুন আনি আর পান্তা ফোরায়, হার মানিনি তবু-
বেকার ছেলের পকেট ফাঁকা। বুকভর্তি সবুর।

তুমিও ঠিক দিকভোলা এক জলফড়িংয়ের মতো-
সকল ব্যাথায় পাখনা মেলে জুড়িয়ে দিলে ক্ষত।'

ঝাপসা হয়ে এলো চোখের ভিতরটা। শমিতের কাছে সত্যিই তো তখন পর্ণা ছাড়া আর কেউ নেই। রোজ রোজ বাবার হাতে অত্যাচারিত হওয়া তার একটা গাঢ় অন্ধকার জীবনে শমিত যেমন অসংখ্য জোনাকির আলো নিয়ে এসেছিল, তেমন শমিতের জীবনেও তো সে নিজে চাঁদের থেকে কম কিছু ছিলোনা। একের পর এক ব্যর্থতা যখন শমিতকে গ্রাস করে নিচ্ছিল তখন একমাত্র সে নিজে ছাড়া আর কেউ শমিতকে সামলাতে পারতোনা। শক্ত করে নিজের সব ভাঙ্গনে শমিত ওর হাতটা বরাবর ধরে থাকতো। দুনিয়ার সব্বার দিকে আঙুল তুললেও পর্ণা বুকে টেনে নিলেই তো লোকটা এক লহমায় ঠান্ডা হয়ে যেত। চোখ ভিজে গেলো। ভালোবাসা জেদের কাছে বড্ড নিষ্ক্রিয়। আবার চোখ নামালো চিঠির দিকে...

'চিঠির কাছে মুহূর্ত দিই, প্রেমের কাছে ইতি-
ভুল ঠিকানার এপার ওপার স্মৃতির বিস্তৃতি।

দেহের কাছে দুহাত পাতি, মনের কাছে আয়না-
দগদগে সব ঘা দেখা যায়, তোমায় দেখা যায়না।

জেদের কাছে নতজানু হই, প্রেমের কাছে ম্লান,
প্রতিশ্রুতি বয়সে বড়, সম্মানে অভিমান।

কেমন করে ভাঙলে সকল, সোহাগ, আদরভূমি?
দাঁড়িয়ে আজও ঠায় সেখানেই। কোথায় আছো তুমি?'

একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি থেকে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছিলো ওদের। শমিতকে প্রচন্ড ভালোবাসতো বলেই পর্ণা কোনদিনই সহ্য করতে পারতো না শমিতের অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা। সেবার অফিস ট্রিপের শেষে, বিদেশ থেকে ফেরার পর যখন ফেসবুকে কিছু ছবি দেখে জানতে পারলো যে শমিত তার এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছিলো , আর নিজেকে সামলাতে পারেনি পর্ণা। সেই যে সবকিছু ভেঙে গেলো, আর কিছুতেই ঠিক করতে দেয়নি সে শমিতকে। শমিতের হাজার চেষ্টা করার পরেও জেদ থেকে একটুও নড়েনি সে নিজে। তারপর রোহন এলো তার লাইফে। আর ফেরত আসার কথা একবার ও ভাবেনি পর্ণা। কোনোদিনও।

এর মধ্যেই কাকীমা এলো একবার। ভাঙা গাল, এলোমেলো চুল, দিকভ্রান্ত চোখ। ঘরে ঢুকে জানলাটা খুলে দিয়ে চলে গেলো। কথা বললো না একটাও। বেশ বুঝতে পারলো তার আসাটা একদমই পছন্দ করেনি কাকিমা। শেষবার যখন কাকিমার সাথে দেখা হয়েছিল তখন কাকিমা তাকে নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু ভাবত কি? মনে করার চেষ্টা করলো পর্ণা। জানলার কাছে আর একবার উঠে গেল। ওরা বাঁশগুলো বেঁধে ফেলেছে, এবার কাপড় দিয়ে ঢাকবে।
শমিত যে কবে থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেছে তার খবর কোনোদিন পায়নি পর্ণা। আসলে খবর নিতেই চায়নি সে কোনোদিন। আবার ফিরে গেল চিঠির পাতায়। চোখ মুছে পড়তে শুরু করলো...

' ভুল বুঝে তুমি হারিয়ে গ্যালে, অবিশ্বাসের অরণ্যে-
ভালোবাসার ভাঙন আছে। ভেতর থেকে মরণ নেই।

তারপরে আর খোঁজ রাখনি, কেমন আছো, ভালো?
আমার পাড়ায় নামিয়ে আঁধার, কোথায় প্রদীপ জ্বালো?

হয়তো এখন সব ভুলিয়ে শরীর শরীর সুখে-
তুমি গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ো মিথ্যেকথার বুকে।

মন তবুও কেমন বোকা। তোমার পাড়ায় চলে।
অন্ধ ভাবে লোকে আমায়। আলোর গল্প বলে।

যাও উড়ে যাও, মন পাখি আজ, তাকে খবর দিও 
আর জ্বলি না এখন আমি। ভীষণ নিষ্ক্রিয়...

যাওয়ার সময় হয়ে এলো। বিদায় কলম, গিটার..
তোমরা আমায় শান্তি দিলেও মুক্তি দেবে চিতা।

এই জনমে হলোনা তো ছাই। পরের জনমে তবু....
চাইবো তাকে সব্বার থেকে। পৃথিবী বলবে 'কবুল'।'

শমিতের দাদা কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি পর্ণা। খবরটা শমিতের দাদাই দিয়েছিল তাকে কাল অফিসে গিয়ে। আর হাতে এই চিঠিটা।
চোখে চোখ পড়তেই  রুমালটা এগিয়ে দিলো দাদা। বললো 'চোখ'টা মোছ। তোর বর আর ছেলেকে নিয়ে আসিস কিন্তু কাল। শমিতের শেষ ইচ্ছা ছিল...'
- দাদা তোমরা ওকে বোঝাও নি কেনো?
- চেষ্টা করিনি ভাবছিস? তুই তো চিনতিস ওকে। ও কারোর কথা শুনতো ,তোর ছাড়া? কাউকে চিনতো তোকে ছাড়া? কেনো এমন করলি বল তো তুই? একবার কথা বলতে পারলিনা....? 
কেঁদে উঠলো দাদা। পর্ণার পর শমিতের খুব কাছের বলতে এই একটা লোকই ছিল। চোখ মুছতে মুছতে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ওদিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে পর্ণা এবার চিঠিটার শেষের দিকটা পড়তে শুরু করলো -

'এই চিঠি তুমি পাবে যেদিন জারি হবে সমন-
সেদিন তোমার ব্লকলিস্ট থেকে উঠিও আমার নাম।
আর কোনোদিন হবেনা দেখা, করবোনা আর ফোন।
জীবন দিয়েই শিখবো প্রিয়া, উপেক্ষাদের দাম।

সেদিন তুমি কাঁদবে নাকি ছিঁড়েই দেবে আমায়!
নিথর ঠোঁটে ঠেকাবে কি তোমার নরম গাল?
ঠোঁটের রঙিন দাগ রেখো প্লিজ আমার মলিন জামায়,
নিপুণ হাতে লুকিয়ে নিও খুন আর তরোয়াল...।

মাফ করেছি তোমায় কবেই। এইটুকু স্রেফ জেনো...

আজন্মকাল তোমার প্রেমে বিদ্ধ এ লোক,
তোমায় ছাড়াই তোমার সাথে বৃদ্ধ হলো।

তোমায় ছাড়াই তোমার সাথে বৃদ্ধ হলো.... #Read_the_full_article
'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির।
প্রজাপতির আয়ুর মতোই আমাদের তকদির-

ফুলের কাছে সোহাগ সোহাগ, গাছের কাছে ঘৃণ্য
অভিযোগের স্বল্প আকার। ছায়ায় বিস্তীর্ণ...'

শমিতের চিঠির শুরুর চারটে লাইন পড়েই কেঁপে উঠলো পর্ণা। কাব্যি করতে কবে থেকে শুরু করেছিল শমিত? ছোট থেকেই তো বাংলার সাথে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক! সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা। প্রথম যেদিন রংনাম্বারে তাদের আলাপ সেদিন উল্টোপারের ছেলেটা ঠিক করে কথা অবদি বলতে পারতো না। একবছর ধরে তারা শুধু ফোনে কথা বলেছে দিনরাত। বেশির ভাগ সময় তো তাকেই কথা বলতে হতো। আর ওই পারে শমিত শুধু 'হুঁ,হ্যাঁ' দিয়েই সারা। তারপর এলো সেইদিন। তাদের প্রথম দেখা.. আবার চিঠিটার দিকে মুখ নামালো পর্ণা...

#Read_the_full_article 'হাওয়ার কাছে ছটফটে খুব পাতার কাছে স্থির। প্রজাপতির আয়ুর মতোই আমাদের তকদির- ফুলের কাছে সোহাগ সোহাগ, গাছের কাছে ঘৃণ্য অভিযোগের স্বল্প আকার। ছায়ায় বিস্তীর্ণ...' শমিতের চিঠির শুরুর চারটে লাইন পড়েই কেঁপে উঠলো পর্ণা। কাব্যি করতে কবে থেকে শুরু করেছিল শমিত? ছোট থেকেই তো বাংলার সাথে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক! সে প্রায় বছর তিরিশ আগের কথা। প্রথম যেদিন রংনাম্বারে তাদের আলাপ সেদিন উল্টোপারের ছেলেটা ঠিক করে কথা অবদি বলতে পারতো না। একবছর ধরে তারা শুধু ফোনে কথা বলেছে দিনরাত। বেশির ভাগ সময় তো তাকেই কথা বলতে হতো। আর ওই পারে শমিত শুধু 'হুঁ,হ্যাঁ' দিয়েই সারা। তারপর এলো সেইদিন। তাদের প্রথম দেখা.. আবার চিঠিটার দিকে মুখ নামালো পর্ণা...