কবিতা :নরকের দ্বার হতে বলছি নরকের দ্বার হতে বলছি আমি পবিত্র রক্তের বিকৃত উত্তেজনার কথা বলছি। যে পিতৃলয়ে স্বদোহিতাও পিতার ভোগের শরাব হয়ে বাঁচে লজ্জায় ঘৃণায় আড়ষ্ট হয়ে নীবরে নিভৃতে অস্তিত্বে লালন করে পিতৃলালসার জারজ সন্তান। যে শিক্ষকের কামনায় অন্তঃসত্ত্বা দশ বছরের শিশু, যে সমাজ ক্ষমা করে নি আমার পঞ্চবর্ষীয়া বোনকেও, যার বুক হতে পুতুল কেঁড়ে নিয়ে চেপে দিয়েছে বিকৃত যৌন লালসার বুলট্রেজার, যে রাষ্ট্র প্রত্যেহ হজম করে নিমতলা চকবাজার বনানীর শশ্মান ট্রাজেডি, হনন করে গণমানুষের অধিকার বেঁচে থাকার রসদ। যে শহর স্বার্থের প্রয়োজনে মজলুমের টুটি চেপে ধরে দুর্বলের পেটে লাথি মেরে গড়ে তুলে স্বর্গীয় প্রাসাদ নিরন্ন মানুষগুলোকে কুকুর ভেবে উষ্ঠি মেরে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে, সে পিতা সে শিক্ষক সে সমাজ সে রাষ্ট্র সে শহরকে আমি ঘৃণা করি। এ রাজপথে মৃত্যুর মিছিল এ দুর্নীতির আখড়াময় বাকশালী রাজনীতি এ শোষক মন্ত্রণালয় এ বিচারহীন সমাজ এ র্নিভোটা গণতন্ত্রকে আমি স্বাধীনতা মানি না। জনতার মুখে আড়ষ্ট শিকল এঁটে উন্নয়নের কলা দেখানো কভু হতে পারে না মুক্তির স্মারক কভু হতে পারেনা স্বাধীনতা। স্বাধীনতা? তুই কি তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার বিদ্রোহী আগুন, নাকি লক্ষ শহীদের রক্তের স্রোতে ভেসে আসা জারজ সন্তান? নাকি অত্যাচারী জুলুমবাজের পিশুন? নাকি ওমরের ন্যায়পরায়ণ খোলা তলোয়ার। যেখানে কৃষকের ঘাম রক্তের নির্যাস হয়ে ঝরে শ্রমিকের ফোঁসকাপরা হাতের পরশে গড়ে উঠে সভ্যতার ভিত্তি যেখানে যুবকের কাঁধে এখনো রাইফেলের কুঁজ বিদ্যমান যেখানে ন্যায়ের সূর্য ছিনিয়ে আনিতে বয়ে গেছে পবিত্র রক্তের স্রোতধারা, সেখানে কেন এ নগ্নতার রাজত্ব? কেন এ বৈভব বৈষম্যতা? কেন সুপ্রিমকোর্টের জানালার গ্রিলধরে কাঁদে ন্যায়বিচারের বাণী? কেন সংসদ সংবিধানে একচেটিয়া রাজত্ব? তোমরা কি ভুলেছো সেই বীভৎস ইতিহাস - গাছের সাথে হাত পা বাঁধা বাবার মুন্ডুহীন দেহ মায়ের জরায়ূ ফাঁটানো বুটের প্রহার, শিশুর বুক ঝাঁঝরানো ঘাতকের বুলেট নির্মমতা বারান্দায় পড়ে থাকা অবলা বোনের বস্ত্রহীন ছিন্নভিন্ন দেহের বীভৎসতা ? যার বিনিময়ে কিনে এনেছি এ স্বাধীন মাটি সে মাটি কভু দালালের ঘাঁটি দেবো না। হতে দেবো না ধর্ষকের মুড়ির মোয়া। আজও একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলো, ডাইরীর পাতায় লিখা হলো তার বিবস্ত্রা ইতিহাস উরুতে নিতম্বে নখর আঁচড়ে টপটপ করে রক্ত ঝরছে, অগ্রজ দন্তাঘাতে ছিঁড়ে গেছে স্তনের নিপল। না, আজ আমি তার ব্যাখ্যা দিতে আসি নি, শুনাতে আসি নি ধর্ষকের অট্টহাসি, ধর্ষিতার বীভৎস আত্মচিৎকারের অডিও স্কিপ। এসেছি বুকের ভেতর এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি নিয়ে সময়ের প্রয়োজনে যা জ্বলে উঠতে পারে ছাই করে দিতে পারে এ ধর্ষক সমাজ। আমি এসেছি ওদের নপুংসক প্রত্যয়ে যারা বাহুবলে গ্রাস করে একটা নবারুন স্বপ্ন একটা অবলা পৃথ্বী একটা নিষ্কলুষ হাসিমুখ একটা সদ্যফোঁটা ফুলের পাপড়ি। আমি ওদের মানুষ মানি না যারা প্রকাশ্য দিবলোকে অস্ত্রের ঝলসানি দেখায় রক্তে রক্তে লাল করে সবুজ পতাকা। ওরা আদিম গুহাবাসী জানোয়ার, প্লাইটোসিয়ান যুগের কাঁচা মাংসখেকু নিয়ানথার্ডাল ওরা এজটেক সভ্যতার সেই নৃশংস বর্বর জাতি ফেরাউনের সহচর ওরা জাহেলিয়ার নাস্তিক অত্যাচারী সামুদের বংশধর। আমি ওদের ঘৃণা করি ঘৃণা করি ঘৃণা করি। এরাই বাঙালি জাতির পুরানো শকুন, কালের পরিক্রমায় আজও বেঁচে আছে। এরাই আমার মাকে ধর্ষণ করেছে তেইশ বছর নয়মাস যে মা আজ আটচল্লিশ বছর পরেও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে নি, যার বুকের মাঝে আজও মৃত্যুর মিছিল উদরে বুভুক্ষু খিদে ঘূণেধরা উসন্ন সমাজ অন্নবস্ত্রহীন উদ্বাস্তু মানুষগুলো বাঁচে খোলা আসমান তলে। আজও লাশের গন্ধে উৎকট হয়ে উঠে শহর নগর গ্রামগঞ্জ পথ ঘাট মাঠ। আজও অন্নবস্ত্রহীন মানুষ পড়ে থাকে শহরের অলিতে গলিতে ফুটপাতে স্টেশনে কিংবা ডাস্টবিনের পাশে তারা মানুষ কি কুকুর রাষ্ট্র তা ভাবে না। এখানে রাজপথে হোলি খেলে রক্তের চাকা পড়নের জীর্ণ লাল সবুজ শাড়ি জড়িয়ে দূর্ভাগ্যের কাঁটাতারে অভাগা ফেলানীর মতো গেঁথে আছে এ দেশের ভাগ্য। এ পেশীতান্তুিক আলোহীন গণতন্ত্রকে আমি স্বাধীনতা মানি না ক্ষমতার বলে পাতিদের রাজত্বময় এ অনিশ্চিত জীবন ব্যবস্থাকে আমি স্বাধীনতা মানিনা এ অর্থের বিনিময়ে মেধার মূল্যায়নকে আমি স্বাধীনতা মানি না মানি না মানি না। কেন আজ অজস্র বেকার চিৎকার করে আমৃত্যু অনশনে রাজু ভাস্কর্যে প্রেসক্লাবে রমনায় নজরুল মঞ্চে? কি চাওয়া তাদের? তারা কোটি টাকার চাকুরি চায় না শুধু ফেলে আসা গাঁয়ে ভিটেমাটিহীন বিধবা মায়ের মুখে দুমুঠো অন্ন দিবে বলে। আমরা তো এমন স্বাধীনতা চাইনি চাইনি কখনো বীভৎস আত্মচিৎকাময় দুঃষহ যাতনায় ঠুকরে ঠুকরে আধমরা এ দেশ। চেয়েছি সকল দেশের রানির মুকুটপড়া একটি সোনার বাংলা। চেয়েছি, সবুজ শ্যামল কবিতার মতো একটি দেশ চেয়েছি উদ্বাস্তু বন্দিশালা থেকে শিকল ছেঁড়া একটি অরুণ্যোদয় কি পেয়েছি? পেয়েছি দূষিত বাতাসে উড়ে চলা শকুনের খুবলে খাওয়া এক রক্তাক্ত পতাকা। _ নরকের দ্বার হতে বলছি