আমি বললাম- "আমি তার মধ্যেই এসে যাবো।" মনের এক কোনে আশা কি ওকে দেখতে পারবো, এক দিকে না দেখা পাওয়ার ভয়, একদিকে এই বৃষ্টির মধ্যে ওকে অপেক্ষা করানোর চিন্তা আর অন্য দিকে অস্থিরতা যে যদি দেখা হয় তাহলে কি বলব। চোখ বন্ধ করে একটাই মিনতি করলাম- "আজ কি ভাবেই হোক, আমাকে পৌঁছে দাও ওর কাছে। বাকি তোমার ইচ্ছার ওপরে ছাড়লাম।" গাড়ি চলা শুরু করল দ্রুত গতিতে। অন্য একটা রাস্তা ধরে নিয়ে আসল। আমার গায়ে বার বার বৃষ্টির জল আসছে। ও প্রত্যেক ৫ মিনিট পর জিজ্ঞাসা করছে আমি কোথায় আর আমার প্রত্যেক বার মনে হচ্ছে যদি জায়গা বললে ও চলে যায়। তার মাঝে বলল- "আমার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টির জল লেগে বেশি ব্যথা করছে। কোথাও বসার জায়গা নেই।" মনে অনেক ভালো খারাপ চিন্তা ভাবনা চলছে। "এতক্ষন ধরে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে?...... আমি বললাম আর একবারে মেনে নিল?..... কেন দেখা করতে চায় হঠাৎ?..... নিজের সুখের রাজপ্রাসাদ ছেড়ে আমার শ্মশানে কি দেখবে?.... শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, বাড়ি যেতে বলে দেব?.... এতক্ষণ মেয়েটাকে অপেক্ষা করিয়ে এখন এত ভালো বুদ্ধি কি ভাবে আসে, ভগবান জানে!" ঘড়ি তে দেখি ৮:৩০ আর আমি পৌঁছে এসেছি। যদি বস না ধরতাম আর প্যাসেঞ্জার পেয়ে গেলে ওকে আর এতক্ষণ দাড়াতে হতো না। মেসেজ করলাম, যত স্ট্যান্ড কাছে আসছে আমার বুকের ভেতর অদ্ভুত চঞ্চলতা কাজ করছে। আমি ভাড়া দিয়ে নেমে আবার সোজা পথে হাঁটা শুরু করলাম। কিছুটা এগোনোর পর দেখি ওর কল আসছে "বল!" "এত তারাতারি চলে গেলে হবে? কখনো একটু পিছনে ঘুড়েও দেখো!" আমি পিছনে ঘুরলাম, দেখি একটা চেনা চেহারা আমাকে দেখতে দেখতে আসছে। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো। কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেছি, আমি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে, না কিছু শুনতে পাচ্ছি, না দেখতে, চোখ শুধু ওর দিকে তাকিয়ে। পাশে এসে দাড়ালো আর তার পর আমরা রাস্তা পার করলাম। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ জানালাম। মনে হচ্ছে একটা অন্তরালের পর নতুন কিছু শুরু হচ্ছে। অবশ্য এই অবধি একটু বেশি হয়ে গেছে- ৪ মাস, ১১ দিন, আর ৩ ঘন্টা। অবশ্য এর কারন আমিই, কেননা আমার এত সাহস হচ্ছিল না কি ওর সাথে বিয়ের পর দেখা করি। পারতাম না, ওকে অন্য কারোর নামের শাখা সিঁদুর পরে দেখতে। কিন্তু আজ দেখছি। একটা মেয়ে যাকে দেখে মনে হচ্ছে সোনা গয়না পরে একটা পাখি কে খাঁচায় বন্দী করে রাখা। ওর চোখে চাপা কষ্ট, আমি ভেবেছিলাম হয়তো খুব ভালো কাটাচ্ছে নিজের জীবন। কিন্তু ওকে দেখে সেরকম তো লাগছে না। মনে হচ্ছে অনেকটা খালি হয়ে রয়েছে ভিতরে। চা খেলাম, আমি সিগারেট খেতে খেতে ইশারা করলাম। ও চাইল, হাতটা এগিয়ে আবার পিছিয়ে নিলাম। মারার চেষ্টা করল কিন্তু ওর গায়ের জোরে আমার লাগেনি। আমরা কথা বলছি না, শুধু কিছু মুহুর্তের মধ্যে একে অপরকে দেখছি। এর আগে ও আমার অস্থিরতা বুঝতে পারুক, আমি ওর থেকে দূরে সরে দোকান থেকে আর একটা সিগারেট নিয়ে এলাম। একটু মনস্থির করে ওর দিকে দেখলাম। অনেক কিছু বলতে চায়, হয়তো হাত বুকে জড়াতে চায়, কাঁধে মাথা রাখতে চায় কিন্তু কিছু করতে পারছে না। হাসার চেষ্টাও ওকে সাহায্য করছে না। সময় নিজের নিষ্ঠুর ইশারা দিল। ও বলল, ওকে যেতে হবে। সেই সময় ইচ্ছা করে হাতটা ধরে বলি- "তুই থাক আমার কাছেই। কোথাও যেতে হবে না।" কিন্তু আটকাবো কি করে। আবার ওর কি মনে হলো, পিঠে ৩-৪ টে ঘুষি মেরে আমার পিছনে আসল। বস আসতেই সে চলে গেল। একবার যদি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখত, কিন্তু না। সে চলে গেছে। ©Ananta Dasgupta #anantadasgupta #bengalistory