আমি সেই সাধারণ মেয়ে যে মেয়েটা জন্মানোর সময় অনেকেরই কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ, আমি সেই মেয়ে যাকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় ঘরোয়া সব কাজ। যার জোরে হাসা মানা, লাফিয়ে চলা মানা,গলা ছেড়ে গান গাওয়া মানা, একা বাইরে বেরোনো মানা, প্রতিবাদ করা মানা। আমিই সেই মেয়ে যার কিছু চাওয়াতে প্রথমেই 'না' ছাড়া 'হ্যাঁ'জোটেনি মোটেই, যার ভালোলাগা,মন্দলাগা, ইচ্ছে অনিচ্ছের দাম দিত না কোনো মতেই। "ভালো রেজাল্ট না করলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে না,, যত ভালো নাম্বার তত ভালো পাত্র" হ্যাঁ আমি সেই মেয়ে যাকে লেখাপড়াও শেখানো হয় বিয়ের পাত্র নির্বাচনের নিরিখে,, যার বিদ্যার বহর শুধু মাত্র সন্তান প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে। যাকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় ক্ষমা করতে, নরম হতে, মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করতে, আমি সেই মেয়ে যাকে ছোটবেলা থেকেই জানানো হয় সবাইকে খাইয়ে তারপর নিজে খেতে, যার খিদে পাওয়া মানা, কষ্ট পাওয়া মানা, দুঃখ হলে চোখের জল ফেলা মানা, "তুমি না ঘরের লক্ষী, তুমিই অন্নপূর্ণা"। এত কিছু না এর মধ্যে তিল তিল করে গড়ে ওঠা এক মেয়ে, সে হয়তো কোনো কিছুতেই কম নয় কোনো পুরুষের চেয়ে। নারী হলেও সে তো মানুষ, লাল রক্ত বইছে তার গায়েও, তাকে জন্ম দিতে গিয়ে প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তার মা কেও। তবু,,কেন এই বিভেদ? তিলে তিলে মৃত্যু হয় এক মানুষের, জন্ম নেয় গৃহকর্মনিপুনা এক মেয়ের। আমি সেই মেয়ে, কেউ বিচার করেনা তার গুণের, বুদ্ধিমত্তার, সে কালো না ফর্সা, বেঁটে না লম্বা,মোটা না রোগা, যার বিচার হয় শুধুই বাহ্যিক রূপের। হ্যাঁ আমি সেই মেয়ে যাকে প্রতিনিয়ত লড়তে হয়েছে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে, যে আঁকড়ে ধরেছে সংসারকে,ভালোবেসেছে দুঃখে সুখে। আমি সেই মেয়ে যার কেউ রাখেনি কোনো খবর, তাই তো কবির ভাষায় " আপনারে করে পরজীবন নির্ভর " হ্যাঁ আমি, তুমি, আমরা অতি সাধারণ সেই মেয়ে।। #সুচরিতা