"প্রত্যেক কিছু একটা পুর্ন বিরাম নিয়ে শেষ হয়। তুমি কথায় সেটা দিতে চাও সেটা তোমার ব্যপার।" দোয়েলের কথা হঠাৎ রুঢ় হয়ে গেল। "ব্যপার আমারই কিন্তু ধৈর্য আর অপেক্ষার পুর্ন বিরাম কথায় লাগবে সেটা বলতে পারবি? স্মৃতির পুর্ন বিরাম কথায় আছে, জানিস?" আবার এক অস্থির করে দেয়ার মত নিরবতা। "আমি বলতে পারব না।" দোয়েলের এই উত্তর আশা করছিল অভ্র। "তোর চাঁদ খুব প্রিয় তাই তোকে সেই হিসেবে একটা কথা বলি। আমরা সুর্যের আলো পছন্দ করি, গোধূলির রং পছন্দ করি, কিন্তু তাপ পছন্দ করি না। কেউ নিজে জ্বলছে কিন্তু আলো দিয়ে যাচ্ছে। চাঁদের জন্য সেরকম কোনো পক্ষপাত নেই। চাঁদ অপুর্ন হোক বা পুর্ন, আমরা ভালোবাসি। আমি হলাম সেই সুর্য আর তার তাপের মত। কিছু সময়, কিছু দিন, কিছু মুহুর্তের জন্য আছি কিন্তু সারাজীবনের জন্য নয়। তারপর আমার ভাগ শেষ।" "কিন্তু চাঁদ তো সুর্যের আলো থেকেই আলোকিত হয়। যদি দুজনের মাঝে কেউ আসে তখন গ্রহণ চাঁদের লাগে আর ততক্ষণ থাকে যতক্ষণ সে সুর্য না দেখতে পায়।" দোয়েল অনেক কিছু বলে দিয়েছে কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই বলেনি। "আমরা যা সবসময় পাই সেটাই আমাদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। যদি এটাই হতো তাহলে মানুষ কারোর কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করত না। সে বার বার যার কাছে যায় সেই হলো তার শান্তির স্থান, সেই তার মনের সুর্য। কখনো তার স্পর্শ পাওয়ার ইচ্ছা থাকে, কখনো বুকে জড়ানোর আর কখনো আওয়াজ শুনতে ইচ্ছা করে। এর মাঝে যদি একজন কষ্টে থাকে, সামনের মানুষটা সম্পুর্ন ভালো থাকতে পারবে না।" "কি বলতে চাস তুই? কি বোঝানোর চেষ্টা করছিস?" অভ্রর অবাক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। দোয়েল এরকম কথা কখনো বলেনি আগে। "আমি কিছু বোঝাচ্ছি না আর যা বলার ছিল বলে দিয়েছি। তারপর তোমার ওপর।" দোয়েল পার্স থেকে মোবাইল বের করে দেখল, একটা কল আসছে। অভ্র অন্য দিকে ঘুরে গেল। "হ্যাঁ বলো.... না না আসছি, বেড়াবো এবার.... আমার সব প্যাক করা রয়েছে। বাড়ি এসে তোমার জিনিস গুলো দেখে নেব একবার। তোমার তো অভ্যাস আছে জিনিস ভোলার............ হুম সেটাই।" দোয়েল মোবাইল রেখে একবার অভ্র কে ভালো করে দেখল। অভ্র হাঁটছে, এক হাতে গাছের শুকনো পাতা নিয়ে আর প্রত্যেক সেকেন্ডের মাঝে পিছনে ঘুরে একবার দেখছে সে আছে না নেই। দোয়েলের মনে পড়ল অভ্র কে সেই কাগজটা দিতে হবে। গেটের সামনে আসতে দোয়েল কাগজটা অভ্রর শার্টের পকেটে রেখে দিল। এর মাঝে অভ্রর মনে বয়ে চলেছে তীব্র ঝড় যার কিছু অংশ দোয়েল বুঝতে পারে বুকে হাত রাখতে গিয়ে। বাস এসে দাড়ালো বিনা কোন দেরি তে। প্রতি বারের মত দোয়েল পিছনে তাকাল না। হাতের মুঠো খুলে অভ্র দেখল নিজেকেই নিজের নখে ক্ষত করে রেখেছে। পকেট থেকে কাগজটা বের করে দেখল। দোয়েলের হাতের লেখার সাথে মিশে গেছে অভ্রর একটু রক্ত। ©Ananta Dasgupta #anantadasgupta #nojotostory #bengalistory #part2 #separation